করোনার ভূয়া রিপোর্ট প্রদান করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের শাহেদ গ্রেফতার হলেও অপ্রোয়জনীয় সিজার ও ভুতুড়ে বিল বানিয়ে রোগীর সাথে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেও ধরা ছোয়ার বাইরে কক্সবাজার সদরের সী সাইড হসপিটালের এমডি রফিকুল হাসান।
চিকিৎসা সেবার নামে রোগীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিজার করতে বাধ্য করা, মূল বিলের পাশাপাশি ভুতুড়ে বিল বানিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা সহ বিভিন্ন অভিযোগের পাহাড় জমেছে কক্সবাজার সদরের সী সাইড হসপিটালের এমডি রফিকুল হাসানের বিরুদ্ধে।
এ কারণে কিছুদিন আগে অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ভুতুড়ে বিলের সত্যতা পেয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও অপ্রোয়জনীয় সিজার ও ভুতুড়ে বিল তৈরী করে অর্থ আদায়ের অভিযোগের শেষ নেই।
জানা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিজার করতে বাধ্য করা হয়। সম্প্রতি সিজার করতে আসা তসলিমা সুলতানা বেবী জানান, আমার সিজারের মুল বিলের বাইরে ভুতুড়ে একটি বিল বানিয়ে ২২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
আয়েশা বেগম নামের এক রোগী জানান, নরমাল ডেলিভারীতে একদিনে আমার বিল আসছিলো ৩ হাজার ৩শত ৬০ টাকা কিন্তু সিজার না করার কারণে আমাকে অতিরিক্ত বিল দিতে হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ করলে তারা ব্যাবস্থাও নিয়েছিলেন।
জেসমিন আক্তার নামে এক রোগী জানান, আমার প্রসবজনিত ব্যাথা উঠলে ডাঃ আসাদুজ্জামানকে দেখালে তিনি দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দিয়ে সী সাইডে ভর্তি হতে বলেন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নরমালে করার জন্য অনেক অনুরোধ করার পরেও ভয়ভীতি দেখিয়ে সিজার করতে বাধ্য করেন। পরে বিল দেওয়ার সময় মুল বিল ১৩ হাজার ৬শ ৮০ টাকা হলেও অতিরিক্ত ১৮ হাজার টাকার ভুতুড়ে বিল দেখে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বিল কমানোর জন্য অনেক অনুরোধ করেও কোন কাজ না হলে ধার কর্জ করে এবং সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বিল পরিশোধ করি।
এছাড়াও সিজার করতে গিয়ে মৃত্যু, বাচ্চার পায়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলা, মাথায় গুরুতর আঘাতসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সী সাইড হসপিটালের বিরুদ্ধে।
এভাবে অপ্রোয়জনীয় সিজার বন্ধ ও ভুতুড়ে বিল তৈরী করে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রতারণার ব্যাপারে সী সাইড হসপিটালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন রোগী ও রোগীর স্বজনেরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন গাইনী বিশেষজ্ঞদের সাথে কমিশন ভিত্তিক চুক্তি করে নিজের বলয় তৈরী করে রোগী ভর্তি করান নিজ হসপিটালে। ভর্তি করানোর পর ডাক্তার, নার্স ও কর্মরত ষ্টাফরা মিলে বিভন্নধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে সিজার করতে বাধ্য করেন। সিজার শেষ হলে রোগীদের অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট বিলের পাশাপাশি কোন রকম সীল স্বাক্ষর ছাড়াই ছোট নগদ ভাউচার ব্যাবহার করে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার পর্যন্ত ভুতুড়ে বিল বানিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আদায় করে আসছে এই প্রতারক চক্র।
জানা যায়, গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার একটা অংশ চলে যায় কমিশন ভিত্তিক কাজ করা গাইনী ডাক্তারদের কাছে। এভাবে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন প্রতারকচক্রটির ডাক্তার ও হসপিটালের এমডি রফিকুল আলম।
অতিরিক্ত বিল আদায়ের মাধ্যমে প্রতারণার ব্যাপারে জানতে চাইলে সী সাইড হসপিটালের এমডি রফিকুল হাসান জানান, আমরা অতিরিক্ত বিলগুলো ডাক্তার, নার্স ও অপারেশন থিয়েটারের চার্জ হিসেবে নিয়ে থাকি। কিন্তু সব বিল তো কম্পিউটারের লেখা কাগজে ওটি, ডাক্তার, সার্ভিজ চার্জ সব দেওয়ায় আছে তাহলে হাতের লিখা অতিরিক্ত বিল আদায় কেন জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানান তিনি।
আবারও ভুতুড়ে বিল তৈরী করে অর্থ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ ইমরান হোসাইন জানান, কিছুদিন আগে জরিমানা করা হলেও আবারও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে।
শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ইনচার্জ ডাঃ মহিউদ্দিন মোঃ আলমগীর জানান, এ ধরনের ঘটনা সত্যি খুব দুঃখজনক। লিখিত অভিযোগ আসলে তদন্ত কমিঠি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযোগ প্রমাণিত হলে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশসহ প্রতিষ্ঠানের এমডির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।