আজ আম্মুর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
খুবই সহজ , অথচ অনেক কঠিন একটা প্রশ্ন। মা’রা কেমন হয়? সম্ভবত তা প্রকাশ পাওয়ার জন্য কোন শব্দ বা বাক্য যথেষ্ট নয় । মা হীনতা কেমন হয় তা সম্ভবত প্রকাশ করার ক্ষমতা আল্লাহ কাউকে দেন নি। পৃথিবীতে সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, সেই ভালোবাসার মাঝে যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসবে সে হলো মা। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর সে ভালোবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটির পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন মা।
প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। মা হচ্ছেন জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ন্যায় ও সমতার ধর্ম ইসলাম মায়ের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলাম মাকে উচ্চাসনে স্থান দিয়েছে। ইসলামের ঘোষণা হচ্ছে, মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত। মায়ের সেবা শ্রদ্ধার দ্বারা জান্নাতের হকদার হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে।
এক সাহাবী রাসুলকে [সা.] জিজ্ঞেস করলেন, আমার সুন্দর ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? আল্লাহর রাসুল [সা.] স্পষ্টভাবে ঘোষণা করলেন, তোমার মা। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমার মায়ের পরে আমি কার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করব? আল্লাহর নবি তাগিদ দেয়ার জন্য বললেন, তোমার মায়ের পরেও তোমার মায়ের অধিকার পালন করতে হবে। তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ তোমাকে করতে হবে। এভাবে তিনবার আল্লাহর রাসুল [সা.] মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার কথা বলেছেন। চতুর্থবার বলেছেন, অতঃপর তুমি তোমার বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করবে।
এ জন্য আল্লাহর রাসুল [সা.] বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি কাউকে সেজদা করার নির্দেশ হতো, তবে সন্তানকে নির্দেশ দেয়া হতো তার মাকে সেজদা করার জন্য। মায়ের পায়ের নিচেই আপনার জান্নাত। আমাদের প্রিয় নবি [সা.] পরিণত বয়সে মায়ের সান্নিধ্য পাননি। এ জন্য তিনি আফসোস করতেন। মায়ের সেবা করতে না পারার কষ্ট তার অন্তরে সর্বদা পীড়া দিত। এ জন্য তিনি দুধমাতা হালিমা সাদিয়াকে [রা.] নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
সন্তানের ওপর মায়ের যে হক তা কখনো আদায় হওয়ার মতো নয়। মায়ের বুকের এক ফোঁটা দুধের মূল্য সন্তানের গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও আদায় হবে না। সন্তানের জন্য মায়ের এক রাতের কষ্টের বিনিময় আদায় করা যাবে না কোনোভাবেই। মায়ের সঙ্গে নম্র আচরণ, যথাসাধ্য সেবা শ্রদ্ধা এবং কায়মনোবাক্যে তার প্রতিদানের জন্য প্রভুর দরবারে দোয়া করলে মায়ের হক যৎকিঞ্চিত আদায় হতে পারে। মা সন্তানের জন্য জান্নাতের পথ করে দেন। যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান পেয়েছে।
আজ আম্মুর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী ।
আমার মা , খুবই সাধারণ একজন মহিলা ছিলেন । জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত , বাংলাদেশের আর দশটি মায়ের মত , তার সংসার ছিল তার পৃথিবী । একবুক আক্ষেপ নিয়ে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তখন মা আমাকে নিয়েই সব চেয়ে বেশি চিন্তিত। কারণ আমাকে কিছু করে দিতে পারেনি এমনটা মা ভাবতো। কিন্ত মায়ের অসুস্থতা মাকে অকাতরে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে সেটা তার মনেই ছিল না। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে নিয়েই সব চেয়ে বেশি ভয় ছিল। জানিনা মায়েরা কেন এমন হয়? মা যখন অসুস্থ থাকতো তখন কাউকে বলতেন না। নিজে নিজে সুস্থ হয়ে যাবে ভাবতেন। কিন্তু রোগটা যখন বড় হয়ে প্রকাশ পেত তখন মা বলতেন একটু খারাপ লাগছে। কিন্তু তার আগে কখনোই বলতেন না। তাই মাকে অনেক কথা শুনাতাম! পরে বুঝাতাম আমি তোমার ছেলে আমাকে না বললে কাকে বলবে? মা তখন আমাকে বলতেন টাকা থাকলেই কি খরচ করতে হবে? আমিতো সুস্থ হয়ে যাব। আহারে মা! তোমারা কেন এত পরিবার নিয়ে চিন্তা কর? কেন এত বেশি ভাবতে আমাদের নিয়ে?
মনে আছে মা একদিন আব্বু তার কাজের জন্য কোথায় জানি গিয়েছিল আমার স্কুলের ফি দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। তোমার কাছেও কোন টাকা ছিল না। কিন্তু তুমিতো মা! তোমার হিসাবের তুলবনা হয় না। তোমার কয়েকটা হাস ছিল, হাসের ডিম বিক্রি করে আমাকে টাকা দিয়েছিলে।
মা তোমার অসুস্থতার সময় তোমার যে এক একটা দিন কত কষ্টে কেটেছে সেটা একমাত্র তুমিই জান। আমিতো দূর থেকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তুমি যখন খুব অসুস্থ ছিলে আমি টিউশনির টাকা জমিয়ে তোমার জন্য একজোড়া কানের ধুল বানিয়েছিলাম। তোমার হাতে যখন দিয়েছিলাম তুমি বলেছিলে অহেতুক টাকা নষ্ট করার কি ছিল। আমার এই সবের কি প্রয়োজন। কিন্তু পাড়া,মহল্লার সবাইকে তুমি বলে বেড়িয়েছিলে আমার ছেলে আমার জন্য কানেরধুল কিনেছে। প্রশংসাই পঞ্চমুখ করে রেখেছিলে। যখন অসুস্থতা বেড়ে গেল বাসায় নগদ টাকার ঘাটতি ছিল খুবই। তখন আমি তোমার কানেরধুল গুলো বিক্রি করার জন্য খুজছিলাম তুমি দিতে চাচ্ছিলে না। কারণ আমার দেওয়া উপহার। মারে তুমি যে আমার হৃদয় ছোঁয়ে আছ! তুমি অামার দেখা এক অনন্য ব্যক্তিত্ব প্রিয় মা। অতীব মার্জিত রুচিশীল ব্যক্তিত্ব যার চলনে বলনে শৈল্পিক কারুকার্য, সচেতনতার সুচারু আঁচড় রৌদ্রকোজ্জ্বল ভাবমূর্তিতে! এ আদর্শ চির অমলিন থাকুক সতীর্থদের মণিকুঠায়!
পৃথীবিতে কেউ’ই স্বার্থহীন নয়,প্রতিটি সর্ম্পকেই কম-বেশী স্বার্থ থাকে,শুধু মাত্র মায়ের ভালবাসা টাই নিঃশ্বার্থ,একজন “মা”ই পারেন সন্তান কে কোন স্বার্থ ছাড়া ভালবাসতে। কোন একটা বিষয় মায়েদেরকে দুইবার ভাবতে হয়। একবার তার সন্তানের জন্য, আরেকবার নিজের জন্য। মা আমাদের সকলের জন্য দোয়া করিও। আমরাও তোমার জন্য দোয়া করি। অনেক ভালবাসি মা তোমাকে।
লেখক গিয়াস উদ্দিন
(বি বি এ একাউন্টিং)
কক্সবাজার কলেজ।