আগামী ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলাকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে মাদক নির্মূলের অভিযানে নেমেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি বেনজির আহম্মেদের নির্দেশেক্রমে এ অভিযানে নেমেছে পুলিশ। জুলাইয়ের ২০ তারিখ থেকে কক্সবাজারে নতুন করে চলমান মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সৎ মানুষের মুখোশ পড়ে থাকা বড় বড় ইয়াবা কারবারিরাও এখন ধরা পড়ছে। একেরপর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। এই অভিযানের ফলে ইয়াবার রাজ্যে রীতিমত ভূমিকম্প চলছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলাকে শতভাগ মাদকমুক্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী যেসব এলাকা দিয়ে ইয়াবা আসে, সেইসব এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। কোন অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার হলে ঐ ইয়াবার প্রকৃতি মালিক খোঁজে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ বলেন, ৪-৫ হাত ঘুরে একজন খুচরা ব্যবসায়ির হাতে ইয়াবা পৌছায়। পুলিশও এখন খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী ধরে অনুসন্ধান করে হাত বদলকারীদের ধরে ইয়াবার প্রকৃত মালিককে ধরছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে অনেকে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসপি মাসুদ জানান, ১০২ জন আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তথ্যে ৬৬৭ জনের নাম পাওয়া গেছে। যাদের নাম কোন তালিকায় ছিলো না। ঐসকল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোন প্রভাবশালী এখন আর প্রভাবশালী নেই। প্রভাবশালীদের সকল ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এখন পুলিশের কাজে কেউ আর বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারছে না। ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণার পর থেকে পুলিশ জেলাব্যাপী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। গত ২৩ জুন রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহতে হয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং এর প্রভাবশালী ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমেদ প্রকাশ বখতিয়ার মেম্বার। বখতিয়ার মেম্বার রোহিঙ্গা ভিত্তিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে এতদিন আলোচিত ছিলেন। কুতুপালং এর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলো এই বখতিয়ার মেম্বারের হাতে। খুব বিচক্ষণতার সাথে গত কয়েক বছর ধরে সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, গত দুইবছর ধরে কুতুপালং ক্যাম্প কেন্দ্রিক একটি বড় ইয়াবা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বখতিয়ার মেম্বার। টেকনাফের হ্নীলার ওয়াব্রাং এলাকার ইউনুস নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটকের পরে বের হয়ে আসে বখতিয়ার মেম্বারের নাম। ইউনুসের দেয়া তথ্যে কুতুপালং থেকে বখতিয়ার মেম্বার ও কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. তাহেরকে ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যে আরো ইয়াবা উদ্ধারে গেলে বন্দুকযুদ্ধে বখতিয়ার মেম্বার ও তাহের নিহত হন। ডিসেম্বরে কক্সবাজার জেলাকে পুরোপুরি মাদক মুক্ত করতে অভিযান জোরদার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশও। এদিকে ২০ জুন রাতে কক্সবাজার শহরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মিজান ডিবি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। উদ্ধার হয় ১০ হাজার ইয়াবা। অথচ একসময় এই মিজানও ছিলো ধরাছোয়ার বাইরে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আরো বলেন, এবার অভিযানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়া হবে। কোন ইয়াবা ব্যবসায়ীর রক্ষা নেই। ইয়াবা ব্যবসায়ী সমাজের যতোবড় প্রভাবশালী হোক না কেন, ঐসব প্রভাব এখন আর কোন কাজে আসবে না। দেশকে রক্ষা করতে, দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে কক্সবাজার জেলা-কে ডিসেম্বরের মধ্যে মাদকমুক্ত করা হবে- সেই লক্ষেই পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে।