সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
উপকারভোগীদের কৃষি উপকরণ বিতরণ করলেন এনজিও সংস্থা “মুক্তি “ পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিবন্ধীকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ! দেশে ৪ কোটি মানুষের চলছে দুর্দিন,ঋণ করেই চলছে ৭৪ভাগ পরিবার কোস্টগার্ডের ধাওয়ায় ৭ লাখ ইয়াবা পানিতে ফেলে পালাল পাচারকারীরা ‘ইশ্-মার্ট বাংলাদেশ’ প্রভাষক শাহীন সরওয়ার টানটান উত্তেজনায় শেষ হল শেখ রাসেল গোল্ডকাপ;বিজয়ীদের পুরষ্কার তুলে দেন অতিথিগণ টেকনাফে মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ পরবর্তী নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ টেকনাফে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অভাবনীয় সফলতায় মেম্বার এনামের প্রতিষ্ঠিত বালিকা মাদ্রাসা টেকনাফে “অক্সফাম” কর্তৃক ভাউচার প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ

ওসি প্রদীপের ভয়ে পালিয়ে থাকা ইয়াছমিন ২বছর পর বাড়ী ফিরলেন |বাংলাদেশ দিগন্ত

সূত্র:ভোরের কাগজ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৫৪২ বার পঠিত

টেকনাফের বিতর্কিত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের কুকীর্তি ছিল বহুমাত্রিক। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ছিলেন তার টার্গেট। তাদেরকেও ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করা হতো। ভুক্তভোগীদের একজন জালিয়াপাড়ার ইায়াসমিন আক্তার। স্বামী হাসন আলীকে আটকের পর প্রাণ বাঁচাতে পুলিশকে ২০ লাখ টাকা দিলেও ‘কথিত ক্রসফায়ারে’ তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর স্বামীহারা ইয়াসমিনকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে দাবি করা হয় ৫০ লাখ টাকা। প্রাণভয়ে প্রায় দুই বছর আত্মগোপনে থাকার পর ওসি প্রদীপ গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন ইয়াসমিন। বিজিবিকে ইয়াবার চালান ধরিয়ে দেয়ায় কারবারি ও পুলিশের টার্গেট হন হাসন আলী- এমন দাবি করে ইয়াসমিন তার স্বামী হত্যার তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

ইয়াসমিন আক্তার ভোরের কাগজ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর শুক্রবার ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানায় যোগদানের চারদিন পর দক্ষিণ জালিয়াপাড়া সরকারি স্কুলের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার স্বামী হাসন আলীকে (৩৮) ধরে নিয়ে যায়। চারটি সিএনজিযোগে ওসি প্রদীপ, এসআই সঞ্জীব, মিঠুন, কনস্টেবল রুবেলসহ ৭ জন পুলিশ সদস্য তাকে সবার সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসনের গলায় ও হাতে ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও আংটি ছিল। নিয়ে যাওয়ার একদিন পর স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে চাইলে ইয়াসমিনের কাছে মোবাইল ফোনে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন প্রদীপ। দেনদরবারের একদিন পর রাতে থানার পাশে কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠের পেছনে গিয়ে এসআই সঞ্জীব ও কনস্টেবল

রুবেলের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দেন ইয়াসমিন। স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা জোগাড় করেন তিনি। কিন্তু এরপরও হাসনকে না ছেড়ে আটকে রাখে পুলিশ। এর তিনদিন পর মেরিন ড্রাইভ ঝাউবাগানে ‘ক্রসফায়ারে’ হাসন ও কামাল নামে আরেকজনকে হত্যা করা হয়। তখন হাসনের কাছ থেকে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধারের খবর জানায় পুলিশ। ওই ঘটনায় তিন জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমকর্মীদের সরবরাহ করেন প্রদীপ।

এদিকে হাসনের লাশ দাফনের চারদিন পর ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ফের তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভাংচুর করে। আতঙ্কে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে ছোট বোনের কাছে রেখে বাড়ি ছাড়েন ইয়াসমিন। এরপর এসআই সঞ্জীব ফোন করে তার কাছে ফের ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে স্বামীর মতো তাকেও ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। কয়েক দফায় টাকা দাবি ও হুমকির পর ইয়াসমিন ফোন নম্বর বদলে ফেলেন। অবস্থান নেন চট্টগ্রামের রহমান নগরে এক ভাড়া করা বাসায়। এসময় তিনি সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন গোপনে মোবাইল ফোনে। প্রদীপ ও ক্রসফায়ারের ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখা ইয়াসমিন টেকনাফ জালিয়াপাড়ার বাসায় ফিরেছেন গত ১২ আগস্ট। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের পর প্রদীপ গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তিনি নিজেকে নিরাপদ ভেবে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান ইয়াসমিন। এখন তিনি স্বামী হত্যার বিচার দাবিাতে আদালতে মামলা দাায়ের করবেন বলে জানান।

ইয়াসমিনের দাবি, তার স্বামী জাল বুনে সাগরে মাছ ধরতেন। তিনি ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সোর্স। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ইয়াবা পাচারের ব্যাপারে জানতে পেরে একাধিক বড় বড় চালান তিনি বিজিবিকে ধরিয়ে দেন। এতেই ইয়াবা কারবারি ও পুলিশের চক্ষুশূল হন হাসন। টার্গেট করা হয় তাকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিরোধের পুরনো একটি মামলা ছাড়া থানায় কোনো অভিযোগও ছিল না বলে দাবি ইয়াসমিনের। ওই মামলায় আদালত থেকে জামিনে থাকলেও আটকের পর ক্রসফায়ারে নিহত হলে তাকে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে প্রচার করে পুলিশ। তবে কোনো মামলা বা অভিযোগের কথা পুলিশ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি বলে ইয়াসমিনের দাবি।

অন্যদিকে স্বামী আটকের পর ইয়াসমিন যোগাযোগ করেন টেকনাফ বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা থানায় যোগাযোগ করলেও ওসি প্রদীপ আটকের কথা অস্বীকার করেন। এ নিয়ে বিজিবির তৎকালীন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রদীপের বাদানুবাদের ঘটনাও ঘটে। তবে এ ব্যাপারে বিজিবির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ আগস্ট ওসি প্রদীপ ও দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনহার বোন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ওসি প্রদীপ ও আইসি লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত ও আটক করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫। এরমধ্যে ফাঁস হচ্ছে প্রদীপের একের পর এক অপকীর্তির খবর

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs
error: Content is protected !!