কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত খাত হিসেবে অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড়িয়ে কক্সবাজারে পালিত হয়েছে বিশ^ পর্যটনদিবস। জাতিসংঘের বিশ্বপর্যটন সংস্থা নির্ধারণ করা‘পর্যটন ও গ্রামীণউন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন ও বীচম্যানেজমেন্ট কমিটির যৌথ উদ্যোগে পর্যটন দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ থাকা পর্যটন কেন্দ্রগুলো আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করেছে। যেগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সেগুলোও খুলে দেওয়া হবে। সবার প্রচেষ্টায় সবাইকে নিয়েইকক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে। পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক ও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি কঠোরভাবে তত্ত¡াবধান করছে জেলা প্রশাসন। জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রে যায় সে জন্য বিভিন্নভাবে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য কাজ চলছে।’
পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক ও বীচম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায়অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিঅ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা ও জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের বিকাশে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অংশ-গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আগের যে কোনও সময়ের তুলনায় সৈকতে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। যার জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকরা অনেকটাই নিরাপদ।’
অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘গ্রাম উন্নয়ন নিশ্চিত হলে পর্যটক নিশ্চিতভাবেই গ্রাম অঞ্চলে ভ্রমণ করতে যাবেন। পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দেশে পর্যটনবান্ধব সংস্কৃতি তৈরি ও লালন করতে হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত ঝাউবিথী বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বীচম্যানেজমেন্ট কমিটির একার পক্ষেবিলীন ঠেকানো সম্ভব না। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত ভাঙন রোধে এক টেবিলে বসে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নতুবা অচিরেই হারিয়ে যাবে সৈকতের বিশাল ঝাউবিথী।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনোয়ার কামাল আনু, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এম. রেজাউল করিম, কিটকট মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব ররহমান ও হোটেল মোটেলঅফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিমউল্লাহ।
পরে পর্যটকদের মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিতরণ করা হয় লিপলেট।
উল্লেখ্যঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে ১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটনসংস্থা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে জাতিসংঘ। তবে সংস্থাটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৪ সালে। সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনে ১৯৮০ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ^ পর্যটন দিবস পালন হয়ে আসছে।