নাগরিকত্ব অর্জন একটি সংবিধানিক অধিকার। কারণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ বলা আছে বাংলাদেশের নাগরিক নাগরিকত্ব আইন দ্বারা পরিচালিত। নাগরিকত্ব অর্জনে কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্তগুলো পালন বা পূর্ণ করলে একটি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করা যায়।তবে রাষ্ট্র নাগরিকত্ব অর্জন হিসাবে অঘোষিত ভাবে প্রথমিক স্বীকৃতি হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন। সরকার ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি আইন পাশ করে। উক্ত আইনের উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে জন্ম ও মৃত্যু বিধিমালা পাশ করেন।যদিও ২০০৪ সালের আইনে বলা আছে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। কিন্ত অপ্রিয় হলেও সত্য দেশে দীর্ঘ নানা জটিলতা দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন বন্ধ রাখেন। গত কিছুদিন আগে জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইটটি খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে জন্ম নিবন্ধন করতে বেশ কিছু কাগজ পত্রের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যাহা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হতে পারেনা।
কারণ দেশে নতুন নিয়মে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে প্রয়োজন বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধনের কাগজ। বাবা কিংবা মায়ের জন্মনিবন্ধনে প্রয়োজন পড়ছে তাঁদের বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন। অর্থাৎ শিশুর জন্মনিবন্ধনে দাদা-দাদীর জন্মনিবন্ধনের কাগজের প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু দাদা-দাদীর জন্মনিবন্ধনের কাগজ না থাকায় পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এ অবস্থায় ‘আদি’ পুরুষের নিবন্ধন নিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে জন্মনিবন্ধন করতে আসা প্রতিটি নাগরিকের।
তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়। জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজনে লাগবে বাড়ির হোল্ডিং কর পরিশোধের রশিদ, ভাড়াটিয়া হলে মালিকের। আরো আছে, শিশুর জন্মের নিশ্চয়তার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের সনদ। এরপর রয়েছে নানা ধরণের প্রক্রিয়া। আর এসব প্রক্রিয়া শেষে শিশুর জন্মনিবন্ধন পেতে লেগে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
বাস্তবিক ক্ষেত্রে এই সব ডকুমেন্টসের কথা আইনে বলা নাই। কারণ সরকার ২০১৮ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত একটি বিধিমালা পাশ করে। উক্ত বিধিমালা ৯ এর মধ্যে জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের কথা বলা আছে।যদিও বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করতে পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র সাথে অন লাইন জন্ম নিবন্ধন চাওয়া হচ্ছে। উক্ত ডকুমেন্টস গুলো ২০১৮ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালা ৯ এর সম্পূর্ণ বিরোধী। কারন উক্ত বিধানে পড়লে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় সেটি হচ্ছে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে জাতীয় পরিচয়ের পাশাপাশি পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন প্রযোজ্য হলে দিতে হবে। কিন্ত আমাদের দেশে কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য জাতীর পরিচয়ের সাথে পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধনের শর্ত দিয়ে জন হয়রানি করছে। কাজে এই সব ধান্ধাবাজি বন্ধ করে সরকারের উজ্বল ভাব মূর্তি রক্ষাতে জন হয়রানি বন্ধ অাবশ্যক।এই ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি জন প্রতিনিধিদেরকে এই ব্যাপারে যথাযত ব্যবস্হা গ্রহন করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। কারন সামনে নির্বাচন এবং এই সব হয়রানি নিয়ে আপনাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক খেলা খেলতে পারে। তাই জন্ম নিবন্ধন করতে ২০১৮ সালের বিধিমালা যথাযথ অনুসরণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। যদিও অনেকে বলতে চাই সফট ওয়ারের এতদসংক্রান্ত কথা বলা আছে। কিন্ত জন্ম নিবন্ধনের সফটওয়্যারে এতদসংক্রান্ত শর্ত বাধ্যতামূলক জুড়ে দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ বাংলাদেশ জনস্বার্থে সবাই একই সারিতে কাজ করি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।
জিয়াবুল আলম
আইনজীবী।
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জর্জ আদালত