টেকনাফের রঙ্গীখালীতে বিদ্যমান স্বশস্ত্র দুই গ্রুপের খুনাখুনি খেলাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এবার প্রকাশ্য দিবালোকে প্রতিপক্ষের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চিহ্নিত এক সন্ত্রাসী নিহত এবং এক দোকানদার অপহরণের পর বসত-বাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। উভয়পক্ষের প্রচন্ড গোলাগুলিতে সাধারণ মানুষ দোকান-পাট বন্ধ করে আতংকে পালিয়েছে।
নিহত মোঃ তৈয়বের স্বজনেরা জানায়, ২১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টারদিকে হ্নীলা রঙ্গিখালী স্কুল পাড়াস্থ ১টি মুদির দোকানে স্থানীয় দুদু মিয়ার পুত্র এবং ভোলাইয়া বৈদ্য গ্রুপের সক্রিয় স্বশস্ত্র সদস্য মোঃ তৈয়ব (৩০) অবস্থান করছিল। এসময় শফিক মেম্বার গ্রুপের কয়েকজন সদস্য রিক্সাযোগে ওদিকে যেতে দেখে তৈয়ব ভয়ে পালিয়ে গিয়ে তার গ্রুপের লোকজনকে খবর দিয়ে স্বশস্ত্র অবস্থান নেয়। এ খবর পেয়ে মরহুম শফিক মেম্বার গ্রুপের ১০/১২ জনের একটি স্বশস্ত্র গ্রুপ মুখোমুখী অবস্থান নেয়। এরপর দুপক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তৈয়ব সামনের দিকে অগ্রসর হলে প্রতিপক্ষের গুলিতে তৈয়ব ঘটনাস্থলে মারা যায়। এরপরই স্বশস্ত্র ঘাতকেরা বীরদর্পে চলে যায়।
এই ঘটনার পর তৈয়ব পক্ষের লোকজন রঙ্গিখালী ষ্টেশনে এসে ব্যাপক ফাঁকা গুলিবর্ষণের পর আতংক সৃষ্টি করে এবং মাদ্রাসা পাড়ার নুরুল ইসলাম প্রকাশ মজুনার পুত্র মোহাম্ম হোছন প্রকাশ বদাইয়া (২৬) কে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় এরশাদ উল্লাহর পুত্র লুৎফুর রহমানের ২টি, আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমানের ১টি করে বাড়ি ভাংচুর এবং ৫টি গরু নিয়ে যায় বলে লুৎফর রহমান জানান।
এই ঘটনার খবর পেয়ে র্যাব-পুলিশের পৃথক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় এবং জনসাধারণের আনা-গোনা শুরু হয়। তবে যেকোন মুহুর্ত আবারো হামলার আশংকায় সাধারণ লোকজন আতংকে রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) এবিএমএস দোহার নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য প্রেরণের লক্ষ্যে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এই ব্যাপারে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রঙ্গিখালী এলাকায় দেড়যুগ ধরে আধিপত্য বিস্তারের কারণে শফিক মেম্বার গ্রুপ এবং আব্দুল মজিদ ভোলাইয়া বৈদ্য গ্রুপের সৃষ্টি হয়। উভয় গ্রুপ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নেতা এবং প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাদের গ্রুপ টিকিয়ে রাখার জন্য মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং জবর দখল বাণিজ্য করে অবৈধ অস্ত্রের মওজুদ গড়ে। গ্রুপ ভারী করার জন্য তাদের অনুসারীদের দলে টেনে এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে আসছে। উক্ত এলাকার সাধারণ মানুষ প্রাণের ভয়ে এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।