শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, এটাই ছিলো আমার জীবনে প্রথম কক্সবাজার ভ্রমণ, অথচ ছোটবেলায় আমার বেড়ে ওঠাই চট্রগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে! বার বার প্ল্যান করেও আসা হয়নি কক্সবাজার। কিন্ত এবার সাংবাদিকতার সুবাদে চলেই এলাম । একইসাথে প্রথমবারের মতন বান্দরবান জেলা ভ্রমণও হয়ে গেলো। সৃষ্টিকর্তা তার মহিমায় অপরুপ সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এ দুটি জেলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যান্ত্রিক শহর ঢাকায় ব্যস্ততার যাতাকলে পিষিত হয়ে একটু খানি নির্মল পরিবেশ খুঁজছিলাম কিন্ত কিছুতেই মিলছিলো না,অবশেষে মহান আল্লাহপাক কৌশলে সেই সুযোগ করে দিলেন। সত্যিই তৃপ্তি ভরে আবারো প্রাকৃতির সুধা নিয়ে গেলাম। এই ক’দিনে এই জেলা দুটির প্রতি বেশ মায়া জন্মে গেছে। আমি ঢাকাকে ভুলতে বসেছি। কিন্ত সাংবাদিকতা এমন এক পেশা যাতে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাই নিতান্ত বাধ্য হয়েই চলে যেতে হচ্ছে। এবারের কক্সবাজার মিশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বার্থে ব্যাপক অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেড়েছে অগ্রযাত্রা’র নেটওয়ার্ক। এখন থেকে দেশের সবচেয়ে বিপদজনক ও অপরাধপ্রবণ সীমান্ত টেকনাফ, উখিয়া এলাকায় সক্রিয় অনুসন্ধান এবং প্রয়োজনে প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে মাদক,সন্ত্রাস,ডাকাতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অপারেশন পরিচালনা করবে অগ্রযাত্রা’র এন্টি ক্রাইম ইউনিট। মরণনেশা ইয়াবার মূল চোরাচালান রুটগুলোও এখন আমাদের সোর্সদের নজরদারির আওতায় চলে এসেছে। এখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা। তবে টেকনাফ যে পরিমাণ বিপদজনক একটি এলাকা,প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সেই তুলনায় অনেক অনেক কম, যদিও টেকনাফে সেনাবাহিনী, বিজিবি,র্যাব, পুলিশ,এপিবিএন, কোস্টগার্ড ইত্যাদি শক্তিশালী বাহিনীগুলোর অসংখ্য সদরদপ্তর,ক্যাম্প, ও চেকপোস্ট রয়েছে। কিন্ত কৌশলগত সক্ষমতার অভাব, দায়িত্বে অলসতা,দুর্নীতিসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত তাদের কার্যক্রম। ফলে অপরাধের লাগাম টেনে ধরা তো সম্ভব হচ্ছেই না বরং উল্টো বাড়ছে অপরাধ ও অপরাধীদের প্রভাব।
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো টেকনাফ আসতে, যেতে বিভিন্ন চেকপোস্টে গাড়িতে তল্লাশির নামে প্রচুর সময় ক্ষেপণ হয়,এতে বিরক্তিকর জ্যাম লেগে যায় সড়কে। আর প্রকৃতপক্ষে এনালগ পদ্ধতির এ চেকিংয়ে হাজার হাজার যাত্রীর চেক করাটাও সম্পূর্ণ অসম্ভব। অথচ মিয়ানমার সীমান্তের অসংখ্য রুট দিয়ে বানের পানির মতন ঢুকছে ইয়াবা, রাস্তায় রাস্তায় চেকিংয়ের নামে যাত্রী হয়রানি না করে সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো যদি কৌশলগত ও সক্রিয় গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় এবং নিয়মিত অপারেশনাল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে তাহলেই মাদকের বিরুদ্ধে ভালো ফলাফল সম্ভব,সেইসাথে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ওপর কড়া নজরদারি চালাতে হবে,কারণ ধীরে ধীরে বাঙালিদের সাথে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা, এদের বেশীরভাগেরই উপার্জনের মাধ্যম ইয়াবা চোরাচালান ও ডাকাতি তাই এ ব্যাপারটা মোটেও হেলাফেলার মতন নয়। তবে ইনশাআল্লাহ সীমান্তে অপরাধ রোধে এখন থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে অগ্রযাত্রা’র এন্টি ক্রাইম ইউনিট। আমার দেশের অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত একটি এলাকার মাটি কলঙ্কিত হতে দেবো না। প্রয়োজনে নিজের জীবন দেবো৷ এ ক’দিনে কাজের স্বার্থে কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে এসেছি। তা নাহয় নাইবা বললাম।
এবারের সফরে ফেনী,চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন কাজে আমাকে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে যে মানুষগুলো তাদের স্মরণ করতে চাই, ফেনীতে অগ্রযাত্রা’র জেলা করেসপন্ডেন্ট আবুল কালামের অতিথেয়তা, বান্দরবানে অগ্রযাত্রা’র স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান রুবেলের আমন্ত্রণে পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত একটি বাড়িতে রাত কাটানো আর স্থানীয় দারুণ সব খাবার দাবার, কক্সবাজারে বিএমএসএফ এর জেলা সেক্রেটারি প্রবীণ ও সংগ্রামী সাংবাদিক জসিম উদ্দিনের সর্বাত্মক সহযোগিতা, স্থানীয় দৈনিক ইনানী পত্রিকার সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার ইউনুস আলীর তথ্যগত সহায়তা, টেকনাফের সাংবাদিক হাফেজ সাইফুদ্দিন আল মোবারক এর দিকনির্দেশনা এবং শেষের ক’দিন সার্বক্ষণিক আমার সহযোগী হিসেবে সাথে থাকা স্থানীয় তরুণ সাংবাদিক ও ছোটভাই সাজ্জাদ হোসেনের অবদান আজীবন মনে থাকবে। এছাড়া স্থানীয় বিজিবি-২ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল ফয়সাল আহমেদ, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম, কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান,মেজর ইয়াসিন, এএসপি বিমান বাবু, টেকনাফ -উখিয়া সার্কেলে নবনিযুক্ত সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলেও বেশ আন্তরিক মনে হয়েছে। মানুষগুলোর জন্য রইলো অনেক অনেক দোআ ও শুভকামনা।
পরিশেষে বলবো আজ যাচ্ছি তো যাচ্ছি না,কিন্ত এই মাটির প্রতি একটা টান সৃষ্টি হয়ে গেছে,ইনশাআল্লাহ আবার আসবো ফিরে,এবারের মতন খোদা হাফেজ….
লেখকঃ
তরুণ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও সম্পাদক, সাপ্তাহিক অগ্রযাত্রা