সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
উপকারভোগীদের কৃষি উপকরণ বিতরণ করলেন এনজিও সংস্থা “মুক্তি “ পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিবন্ধীকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ! দেশে ৪ কোটি মানুষের চলছে দুর্দিন,ঋণ করেই চলছে ৭৪ভাগ পরিবার কোস্টগার্ডের ধাওয়ায় ৭ লাখ ইয়াবা পানিতে ফেলে পালাল পাচারকারীরা ‘ইশ্-মার্ট বাংলাদেশ’ প্রভাষক শাহীন সরওয়ার টানটান উত্তেজনায় শেষ হল শেখ রাসেল গোল্ডকাপ;বিজয়ীদের পুরষ্কার তুলে দেন অতিথিগণ টেকনাফে মুক্তি কক্সবাজার কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ পরবর্তী নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ টেকনাফে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অভাবনীয় সফলতায় মেম্বার এনামের প্রতিষ্ঠিত বালিকা মাদ্রাসা টেকনাফে “অক্সফাম” কর্তৃক ভাউচার প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ

টেকনাফ শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনা কর্মকর্তার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি |বাংলাদেশ দিগন্ত

ওসমান আল হুমাম,কক্সাবজার :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ আগস্ট, ২০২০
  • ৫৫৯ বার পঠিত

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিবেন।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কক্সবাজার জেলা পুলিশর সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মনোনীত একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি। ঊর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে গতকাল শনিবার (১ আগস্ট) মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মাইনুল আমীন স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ শাহ জাহান আলি। অন্য দুই সদস্য হলেন, কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি।
কমিটি ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান করবেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নির্মিতব্য ভ্রমণ সহায়ক একটি ডকুমেন্টারির শ্যুটিংয়ের কাজ করছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। গত ৩ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিল্ম এন্ড মিডিয়া’ বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে শ্যুটিংয়ের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় যান তিনি।

প্রায় ১ মাস যাবত বিভিন্ন এলাকায় চিত্র ধারণ শেষে গত ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে পাহাড় থেকে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের ‘ডাকাত’ সন্দেহ করে পুলিশকে অবহিত করে।

পাহাড় থেকে নেমে মেজর সিনহা এবং তার সাথে থাকা সিফাত নামের শিক্ষার্থী নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার জেলা শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।
আসার পথে শামলাপুর বিজিবি চেকপোষ্টে তাদের তল্লাশী করা হলে পরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাত ৯ টায় শামলাপুর পুলিশ চেকপোষ্টে পৌঁছার সাথে সাথে এসআই লিয়াকত তাদেরকে থামান। এসময় মেজর সিনহা তার পরিচয় দিলে প্রথমে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন লিয়াকত। কিন্তু পুনরায় গাড়িটি থামিয়ে মেজর সিনহা এবং সিফাতের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে কোন কথাবার্তা বলার সুযোগ না দিয়েই সিনহার বুকে পর পর তিন রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত।

নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬) যশোরের ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার মৃত এরশাদ খানের ছেলে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গুলি করার পর রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে স্থানীয় লোকজন এবং সেনাবাহিনীর ‘এএসইউ’র একজন সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেজর সিনহাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এএসইউ’ র ওই সদস্য নিজের পরিচয় দিয়ে সিনহার গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি ছবি তুলতে চাইলে তার পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশের একটি মিনি ট্রাকে করে রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, নিহত মেজর অব. রা‌শেদ এক‌টি তথ্যচিত্র ধারণের কা‌জে এক নারী ও অপর ৩ জন পুরুষ সঙ্গীসহ গত এক মাস ধ‌রে হিমছ‌ড়ির এক‌টি রেস্টহাউ‌জে অবস্থান কর‌ছি‌লেন।

এদিকে এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহতের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র। তারা বলছেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা সেই সময় আর্মি ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কম্বেট কালারের ফুল স্লিভ টি-শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত ছিলেন। সচরাচর এই রঙের টি-শার্ট ও প্যান্ট বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এবং অনেক সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মাঝে এর ব্যাপক চল রয়েছে। যাচাই বাছাই ছাড়াই সেটিকে আর্মি ইউনিফর্ম দাবি করাটা আপত্তিকর।

অপর একটি সূত্রের দাবি, ঘটনা প্রসঙ্গে দায়িত্বশীল পর্যায়ের বিবৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। একবার বলা হচ্ছে উনার সঙ্গে একজন সঙ্গী ছিলেন। আবার বলা হচ্ছে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসলে তারা কয়জন ছিলেন? একটি পর্যায় থেকে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলেও অন্য সূত্র সেটি উল্লেখ করেনি কেন? তাছাড়া মেরিন ড্রাইভের সেই সড়কে অবস্থিত পুলিশ চেকপোস্টের আগে একটি বিজিবি চেকপোস্টও রয়েছে এবং সেদিন নিহত মেজর (অব.) সিনহা সেই বিজিবি চেকপোস্ট পার হয়েই সামনে এগিয়েছিলেন। তাদের ব্যাপারে স্থানীয়দের ডাকাত সন্দেহে পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করা হয়েছিলো বলে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ কেন বিজিবি গার্ডপোস্টে সে সম্পর্কে অবগত করেনি?

বিশিষ্টজনদের মতে, স্পর্শকাতর এই ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। তারা মনে করেন, পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার ইস্যুটি যাতে কোনো মহল গুজব ছড়ানো বা অবান্তর বিতর্ক উষ্কে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে সে ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স)-এর একজন সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বিএমএ লং কোর্সের ৫০তম ব্যাচের কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Bangla Webs
error: Content is protected !!