পর পর চার বার জামিন চেয়েও মুক্তি মিলেনি কক্সবাজারের সুপরিচিত স্পষ্টবাদী সাংবাদিক শহিদুল্লাহ’র। এঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মফস্বল সাংবাদিকদের সংগঠন বিএমএসএফ এবং সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষ গত ২সেপ্টেম্বর বুধবার সাংবাদিক শহীদুল্লাহ’র পক্ষে তার আইনজীবি ফখরুল ইসলাম গুন্দু আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত তা নামঞ্জুর সাংবাদিক শহীদুল্লাহকে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।
সাংবাদিক শহীদুল্লাহ’র আইনজীবি ফখরুল ইসলাম গুন্দু জানান- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো সাংবাদিককে আটক করা হলে স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা আদালত তা সদয় বিবেচনা করেন। কিন্তু এই মামলায় সাংবাদিক শহীদুল্লাহকে এনিয়ে পর পর চার বার জামিন চাওয়ার পরও জামিন মঞ্জুর করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলার অন্যতম জেষ্ট্য এই আইনজীবি প্রতিবেদককে আরও বলেন- আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক যেকোনো সাংবাদিককে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকেই জামিন দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জামিন না দেওয়ায় আমরা জেলা জজ আদালতে মিস মামলা করি। এখানে শুনানি শেষে মান্যবর বিচারক সাংবাদিক শহীদুল্লাহকে জামিন দেননি। এক পর্যায়ে তিনি জানান- আমি ধারণা করছি, বিচারকদের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তা না হলে এমন একজন বঙ্গবন্ধু প্রেমী, দলের দুঃসময়ের কান্ডারী শহীদুল্লাহকে এভাবে কারাগারে বন্দী থাকতে হতো না। এমনিতেই এগুলো জামিনযোগ্য মামলা। কিন্তু সাংবাদিক শহীদুল্লাহর ক্ষেত্রে কেনো এমন হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫মে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার সমিতি বাজার এলাকায় অবস্থিত তার নিজ বাসভবন থেকে গভীর রাত দুইটায় রমজানের সেহেরীকালীন সময়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ সাংবাদিক শহীদুল্লাহকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযুক্ত দেখিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে। এরপর থেকে সাংবাদিক শহীদুল্লাহর পরিবার চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারাগারে যাওয়ার ৪মাস অতিবাহিত হয়ে এখন ৫মাস চলছে। তার স্ত্রী সন্তানসহ ৫জন রয়েছে। সাংবাদিক শহীদুল্লাহ’র স্ত্রী মোস্তফা বেগম এপ্রতিবেদককে জানান- শহীদুল্লাহ কারাবন্দী থাকায় তারা এখন চরম দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। ফেসবুকে নিজের দলের কল্যাণে কিছু কথা বলেছে বলে যদি এধরণের একজন নির্ভীক রাজনৈতিক কর্মী এবং সাংবাদিককে ধুকে ধুকে কারাগারে বসবাস করতে হয় তাহলে এরচেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কি হতে পারে। ৪সন্তানাধি নিয়ে ভরণপোষণ চালিয়ে যেতেও হিমসিম খাচ্ছেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তাঁর স্বামী সাংবাদিক শহীদুল্লাহ’র দ্রæত মুক্তি চেয়েছেন।
এদিকে মফস্বল সাংবাদিকদের সংগঠন বিএমএসএফ-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আহমদ আবু জাফর জানিয়েছেন- এঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের নিরবতা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। পর পর চার বার জামিন চাওয়ার পরও একজন সাংবাদিককে এভাবে বিনা বিচারে মাসের পর মাস আটক রাখায় আমরা পুরো সাংবাদিক সমাজ শঙ্কিত হয়ে উঠেছি। আমরা তার মুক্তির বিষয়ে জেলা কমিটিকে অবিহিত করেছি। এবং আগামী ১২সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি কক্সবাজার আসবে এই বিষয়ে কথা বলতে। স্থানীয় সাংবাদিকদের উচিত সাংবাদিক শহীদুল্লাহকে যে বিষয়ে অভিযুক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা। তিনি মেয়রের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন। সেসব বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কথা বলা উচিত ছিলো। লেখালেখি করা উচিত ছিলো। এটা না করায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিচার বিভাগ একজন সাংবাদিকের ব্যাপারে উদাসীন মনোভাব পোষণ করার সুযোগ পেয়েছে। আমরা এই শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।
এবং সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কক্সবাজার জেলা সভাপতি অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশ জানান- যেহেতু সাংবাদিক শহীদুল্লাহ এক সময় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন এবং সেই সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ফেসবুকে লাইভে কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এটার জন্যই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংক্ষুব্ধ পক্ষ। কিন্তু তিনি যেহেতু বর্তমানে সাংবাদিক হিসেবে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত আছেন সেহেতু তাকে এভাবে আটক রাখাটা আমাদের পীড়া দিচ্ছে। আমরা এতে মর্মাহত হচ্ছি। আমাদের দাবী হলো- শহীদুল্লাহর রাজনৈতিক বক্তব্যের বিপরীতে সংক্ষুব্ধ পক্ষ যেনো তার সেই সব বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে বিষয়টি ঘরোয়াভাবে নিস্পত্তি করেন। এভাবে একজন সংবাদকর্মীকে মাসের পর মাস আটকে রাখাটাকে আমরা সমীচিন মনে করছি না। আমরা অবশ্যই তার দ্রæত মুক্তি কামনা করছি।
এদিকে বিএমএসএফ-এর কক্সবাজার জেলা সভাপতি এবং সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি মিজান উর রশিদ মিজান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন- একজন সাংবাদিককে পর পর ৪ বার জামিন চাওয়ার পরও জামিন দেওয়া হয়নি তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। অথচ এই মামলার বাদী নিজেও একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির মুখপাত্র এবং পাশাপাশি সাংবাদিক। এটাতো দিবালোকের মতো স্পস্ট যে রাজনৈতিক ওই ব্যাক্তি আদালতের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। এভাবে চলতে থাকলে মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাবে। প্রয়োজনে আমরা সাংবাদিক শহীদুল্লাহ’র মুক্তির বিষয়ে রাজপথে আন্দোলনে যেতেও বাধ্য হবো।