পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন রোধ কল্পে রিমান্ড আবেদনে অবশ্যকীয় তথ্য সন্নিবেশন বিষয়ে কিছু কথা
ভূমিকা
কোন ব্যাক্তিকে পুলিশ ফৌজদারি অপরাধে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে একটি অলঙ্ঘনীয় আইনি নীতি হলো গ্রেপ্তারকৃত ব্যাক্তিকে পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট উপস্থিত করতে হবে [১৯৭২ সালের গণপ্রজাতন্ত্ৰী বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের অনুচ্ছেদ নং ৩৩(২) তৎসহ ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ভাগ-৩, অধ্যায়-৫, ধারা নং ৬১ তথ্য ভাগ-৫, অধ্যায়-১৪, ধারা নং ১৬৭]।
গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তারকৃত ব্যাক্তিকে থানায় নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত যে সময় অতিবাহিত হবে তা ২৪ ঘন্টা সময় হিসাব কালে হবে।
== গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড আবেদন ==
পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আসামির নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে যদি বিবেচনা করেন যে, আসামিকে ২৪ ঘন্টার উর্ধকাল হেফাজতে রাখার দরকার, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামির হেফাজত গ্রহণ করার জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাধ্যতামূলক রিমান্ড আবেদন করতে হবে।
পুলিশ কর্মকর্তাকে ১৯৪৩ সালের বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশনের ৪৫৮ নং রেগুলেশন মোতাবেক বিপি ফর্ম নং ৯০ (বাংলাদেশ ফর্ম নং ৫২৬১) ব্যবহার করে রিমান্ড আবেদন করতে হবে (যা নিয়মিত দায়িত্ব সহকারে ভঙ্গ করা হয়)।
== রিমান্ড আবেদনে যে তথ্য অবশ্যই দিতে হবে ==
এযাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ সাধারণত রিমান্ড আবেদনে বলা হয়ে থাকে।
(০১) বিজ্ঞ আদালতের পুরো নাম।
(০২) থানার নাম ও মামলার নম্বর।
(০৩) আসামির পূর্ণ নাম ও ঠিকানা।
(০৪) আসামিকে গ্রেপ্তারের তারিখ ও সময়।
(০৫) আসামিকে গ্রেপ্তার করার স্থানের পূর্ণ ঠিকানা।
(০৬) আসামিকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নেয়ার তারিখ ও সময়।
(০৭) আসামিকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়।
(০৮) আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ফলাফলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
(০৯) যে কারনে হেফাজত প্রয়োজন।
(১০) কত দিন হেফাজত প্রয়োজন।
(১১) গ্রেপ্তারকৃত ব্যাক্তির নিকট থেকে কিছু উদ্ধার হলে তার বিবরণ।
::: নোট :::
(ক) সংযুক্তি হিসেবে জব্দ তালিকার একটি কপি রিমান্ড আবেদনের সাথে বিজ্ঞ আদালতের বিবেচনার জন্য গেথে দিতে হবে।
(খ) গ্রেপ্তার কালে আসামিকে অক্ষত পেলে তা বলতে হবে। কিন্তু আহত হলে আঘাতের বিবরণ দিতে হবে।
(গ) গ্রেপ্তারে কালে আঘাত পেলে কি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তা বিবরণ দিতে হবে ও চিকিৎসা ব্যবস্থা পত্র গেথে দিতে হবে।
== বিজ্ঞ আইনজীবীদের করণীয় ==
বিজ্ঞ আইনজীবীদের রিমান্ড আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে বর্ণিত বিষয়গুলোর কোনটি রিমান্ড আবেদনে না থাকলে তা বিজ্ঞ আদালতে লিখিত ভাবে উল্লেখ করে রিমান্ড আবেদনের আপত্তি বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করতে হবে।
বর্ণিত দরখাস্ত শুনানিতে অবশ্যই বিনয় ও একই সাথে দৃঢ় ভাবে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে বিজ্ঞ আইনজীবীকে বিজ্ঞ আদালতের নিকট ন্যায়সঙ্গত আদেশ দানের জন্যে আবেদন করতে হবে।
বিনীত,
ব্যারিস্টার খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা।
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।