১৯৮৩ সালে বেআইনি সামরিক সরকারের আমলে বাংলাদেশ পুলিশের বাহিনী এক লজ্জার শিকার হয়। আর তা হলো বঙ্গবন্ধুর আমলে পুলিশ বাহিনীর বাহিনী প্রধান আই.জি.পি. এর কাঁধে রাঙ্ক ব্যাজ শাপলা তোলে দেয়া হয় ও ৩ ষ্টার জেনারেল পদমর্যাদা থেকে অবনমিত করে ২ ষ্টার জেনারেল করা হয় যা পুলিশ বাহিনীর জন্য ছিল দারুন ভাবে অবমাননাকর (Hall of Shame)।
এখানে একটি বিষয় না বললেই নয় আর তা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপে ১৯৮৩ সালের পর হতে দীর্ঘ ২৭ বছর পর জানুয়ারী ২০১০ সালে আই.জি.পি. পদকে ২ ষ্টার জেনারেল থেকে ৩ ষ্টার জেনারেল এবং সিনিয়র সচিব পদ মর্যাদা দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে ভিন্ন মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। এছাড়াও জানুয়ারী ২০১২ সালে পুলিশ বাহিনীতে ৫ জন অতিরিক্ত আই.জি.পি. এর পদ অফিসার গ্রেড-১ হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় জুলাই ২০১২ ইংরেজি তারিখে উপ-পরিদর্শক (এস.আই.) পদকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী গেজেটেড কর্মকর্তা এবং পুলিশ ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী গেজেটেড পদ থেকে প্রথম শ্রেণী গেজেটেড নন-ক্যাডার পদে উন্নীত করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানে বর্তমানে টপ পুলিশ ম্যানেজমেন্ট পদবি নিম্নরূপঃ-
(১) আই.জি.পি. = ৩ ষ্টার জেনারেল ও সিনিয়র সচিব
(২) অতিরিক্ত আই.জি.পি. = অফিসার গ্রেড-১
(৩) অতিরিক্ত আই.জি.পি. = অফিসার গ্রেড-২
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানে সবরডিনেট পুলিশ অফিসারদের পদবি বর্তমানে নিম্নরূপঃ-
(১) পুলিশ ইন্সপেক্টর = দ্বিতীয় হতে প্রথম শ্রেণী গেজেটেড (নন ক্যাডার)।
(২) পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর = তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী গেজেটেড।
এখানে প্রশ্ন হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্ৰীর অনুকম্পায় পুলিশকে দেয়া এই সম্মান ধরে রাখা পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের একান্ত কর্তব্য নয় কি?
::::::::::: শেষ কথা :::::::::::
প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিচারক Lord Alfred Thompson Denning, MR, Court of Appeal (Civil Bench) বলেছেন যেকোনো সুশীল সমাজে ক্ষমতার অপব্যাবহারের বিরুদ্ধে কঠিন জবাব দেবার সঠিক মাধ্যম হলো আইনি আশ্রয় ও পরিক্রমা গ্রহণ করা। Lord Denning এর ভাষায় “The Only Admissible Remedy for any Abuse of Power … in a Civilised Society is ….. by Recourse to Law. [Lord Alfred Thompson Denning, What Next in the Law, 1993, Butterworths Law Publishers Limited, UK.]”।
এমনকি আমরা যে দেশকে আইনের সূতিকাগার মনে করি সেই ব্রিটেনেও পুলিশের “Clean Image” পুত-পবিত্র ছবি দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে Lord Denning বলেন “…… a Uniform Policeman who at the request of the Thieves in Return for a Bribe, Directs Traffic away from the Site of the Crime. Is He to be Allowed to Keep the Money?” [Lord Alfred Thompson Denning, Landmarks in the Law, 1993, Butterworths Law Publishers Limited, UK.]।
দেশের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা, জনগণের নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা, জনগণের সম্পদ নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, অপরাধের তদন্ত, ফৌজদারি বিচার ব্যাবস্থার অন্যতম খুঁটি হলো বাংলাদেশ পুলিশ। এই খুঁটি যত দুর্বল হবে সমাজে অনাচার ততই বাড়বে। কাজেই পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ত তাঁদের কাজে মনোনিবেশ করতে হবে যাতে আর কোনো প্রদীপ বা লিয়াকত পুলিশ বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। বাংলাদেশ পুলিশ কেবল দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তার প্রতীক তা নয়, বরং বাংলাদেশ পুলিশ ঐতিহ্যবাহী একটি বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীণতা যুদ্ধে যার ঐতিহাসিক গৌরবগাথা রয়েছে।
পরিশেষে বলতে চাই যে, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের কাঁধে পরে থাকা ঝকমকে রাঙ্ক ব্যাজের আলোক ঝলকানিতে জনসাধারনের চোখ বন্ধ করে রাখার কোনো অবকাশ নেই। যদি থানা পুলিশ সহ অন্যান্য পুলিশ স্থাপনায় আদমখোর পুলিশ সদস্য বছরের পর বছর মানুষ হত্যার মহা উৎসব করে যেতে পারে এবং এত বড় ঊর্ধতন পুলিশ প্রশাসন যন্ত্র থাকার সত্ত্বেও কেবল নীরব ও দায়সারা দর্শকের ভূমিকায় অবর্তীণ হতে পারে, তাহলে এতবড় পুলিশ প্রশাসনের আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
বিনীত,
ব্যারিস্টার খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা।
হেড অফ দি ল’ সার্জেণ্টস চেম্বার (এল.এস.সি.)
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা।