পরবর্তীতে উক্ত আইনের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সরকার ২০১৮ সালের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ নামে নতুন আইন প্রবর্তিত করেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পূর্বের চেয়ে বর্তমানে মাদকসক্তের সংখ্যা দ্বিগুন। যাহা আমাদের জন্য ভয়াবহ। কারণ এই ভাবে যদি আমরা মাদকাসক্ত দুর করতে না পারি, তাহলে অদূর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ধ্বংস হতে বেশিদিন লাগবেনা।
এসব সমস্যা থেকে রেহায় পেতে দেশে বারবার নতুন আইন পাশ করে কেন মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না? মাদক বিস্তারের মূল কারণ চিহ্নিত না করে, আইন পাশ করে সাজার হুমকি দিলে কখনো অপরাধ ধমন করা যাবেনা। কারণ আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুধাবন করলাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা অধিকাংশ আসামিদের নিম্ন আদালত কতৃক সাজা প্রদান করলেও উচ্চ আদালতে আইনের ফাকফৌকরের কারণে আসামীদেরকে আপীলে খালাস প্রদান করেন।
এসব খালাসের মূল কারণগুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, দায়েরকৃত মামলার এজাহার ও ১৬১ ধারার জবানবন্দি ও আদালতে প্রদানকৃত সাক্ষীর জবানবন্দিতে গড়মিল, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুসরণ পূর্বক জব্দ তালিকা প্রস্তুুত না করা, নিরপেক্ষ পাবলিক স্বাক্ষী কতৃক মামলায় সাক্ষ্য প্রদানে ব্যর্থতা, উদ্ধারকৃত মাদক রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা না করা সহ রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনায় খামখেয়ালির কারণে অনেক সময় মামলা দুর্বল হয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিত ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের মূলণীতি অনুসারে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ঘটনাটি ভিত্তিহীন করে তুলে।
ফলশ্রুতিতে আসামী অনেক সময় মামলা থেকে সাক্ষ্য প্রমাণে বেকসুর খালাস পেয়ে থাকেন। এই খালাস পাওয়ার পর মাদকের সিন্ডিকেট চক্র আবার মাদক ব্যবসা করতে উদ্ভব হয়ে থাকে। কারণ পূর্বের অপরাধ থেকে আইনের ফাকফৌকরের কারণে খালাস পাওয়ার পর নতুন করে উক্ত ব্যাবসায় জড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের সর্বাত্মক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তাই আইন পাশ না করে আইনে উপযুক্ত প্রয়োগের ব্যাবস্হা করা হউক। অপরাধীরা যাতে করে আইনের ফাকফৌকর দিয়ে পার না পায় সেই ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষিত করতে হবে।তাছাড়াও মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অঞ্চল মিয়ানমার, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যাবহার করছে।
তারা যাতে মাদক পাচার করতে না পারে সে ব্যাপারে কূটনীতিক তৎপরতা সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের উপর কৌশলগত চাপ সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সীমান্তে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো সতর্ক অবলম্বন করে মাদকের বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করলে মাদক সমূলে উৎপাটন করা না গেলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জিয়াবুল আলম
আইনজীবী
চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত।