কে এই মেজর সিনহা?
নাম: সিনহা মোঃ রাশেদ খাঁন, (পি.এস.সি.)
পদবি: মেজর
কোর: ইনফেন্ট্রি (পদাতিক)
কমিশন: ৫১ বি.এম.এ. লং কোর্স অফিসার
স্পেশাল পোস্টিং: স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এস.এস.এফ.) পার্সোনেল
অবসর: ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসর
সার্ভিস রেকর্ড: স্বেচ্ছায় অবসর পর্যন্ত Impeccable Record
::::: “Res Ipsa Loquitur তথা ঘটনা নিজের কথা বলে” মতবাদ মোতাবেক মেজর সিনহা Rules of Engagement অনুসরণ করেছেন :::::
প্রশ্ন হলো টেকনাফ থানার OC ও বাহারছড়া ফাঁড়ির IC কোন যুক্তিতে একজন Highly Well Decorated Army Officer এর বুকে গুলি করে তাও আবার তিন রাউন্ড গুলি?
মেজর সিনহা একজন Seasoned Army Officer হিসেবে তাঁর লাইসেন্সড আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার ক্ষেত্রে Rules of Engagement বিষয়ে সতর্ক ও নিয়মানুবর্তী ছিলেন বলেই তিনি তাঁর সাথে থাকা অস্ত্র ব্যবহার করেন নাই। এটি ছিল মেজর সিনহার Rules of Engagement এর প্রতি তাঁর দেখানো সেনা মানুষিকতার বিষয়ক সম্মানবোধ।
পুলিশ যখন রনো কৌশলে চৌকষ মেজর সিনহাকে চ্যালেঞ্জ করে, মেজর সিনহা তাৎক্ষণিক তাঁর হোলস্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি করতে পারতো। কিন্তু মেজর সিনহা তা করেন নাই।
মেজর সিনহার মতো একজন Highly Trained SSF Officer অস্ত্র ব্যবহার করলে কিছু বুঝে উঠার আগেই ইন্সপেক্টর লিয়াকত লাশ হয়ে যেত। এই “ঘটনার ক্রম (Sequence of the Event)” প্রকাশ করে যে মেজর সিনহার মৃত্যু একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা (Murder with Malice Aforethought)।
::::: ওসি টেকনাফ থানা, আইসি পুলিশ ফাঁড়ি ও এস.পি. কক্সবাজার আদমখোর পুলিশ পরিণত হয়েছে :::::
কাজেই অস্ত্র পরিচালনায় বিশেষ পারদর্শী সাবেক এস.এস.এফ. অফিসার মেজর সিনহা সাথে অস্ত্র থাকার সত্ত্বেও যখন পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের গুলিতে মারা যায়, তখন এটা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ যে পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত, তার নিয়ন্ত্রণকারী ওসি ইন্সপেক্টর প্রদীপ ও এস.পি. মাসুদ হোসাইন আদমখোর পুলিশ কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছে।
::::: এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে নিয়মিত মামলা দেয়া ও বিচার শুরু হোক :::::
(১) যখন ইন্সপেক্টর লিয়াকত (আই.সি. বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি, টেকনাফ থানা, কক্সবাজার জেলা পুলিশ) মেজর সিনহাকে তার কাস্টডিতে নিয়ে নেয় এবং বিনা প্ররোচনায় মৃত্যু ঘটায়, তখন ইন্সপেক্টর লিয়াকত ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির বিধান মোতাবেক বা ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন মোতাবেক বিচার বহির্ভূত হত্যার সংঘটন করেছেন।
(২) যখন ওসি ইন্সপেক্টর প্রদীপ নির্দেশ প্রদান করেন অথবা ইন্সপেক্টর লিয়াকতের অপরাধ মূলক কার্য অবগত হয়ে কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই, তখন ওসি ইন্সপেক্টর প্রদীপ ১৮৬০ সালের দন্ড বিধির বিধান ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন মোতাবেক বিচার বহির্ভূত হত্যার সংঘটনে অংশীদার (Joint Enterprise) হয়েছেন।
এখানে ওসি ইন্সপেক্টর প্রদীপের অংশগ্রহণ (Participation) ও দায় (Liability) ছিল দুইভাবে (2 Ways), যেমন:-
(ক) অনুমোদন দিয়ে (By Commission)।
(খ) শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব থেকে (By Omission)।
(৩) জেলা পুলিশ সুপাররের অংশগ্রহণ (Participation) ও দায় (Liability) এখানে অংশগ্রহণ ছিল চারভাবে (4 Ways), যেমন:-
(ক) অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মকর্তদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দেয়া।
(খ) অনুরূপ হত্যাকান্ডে নীরব অনুমোদন দেয়া (By Commission)।
(গ) শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব থেকে (By Omission)।
(ঘ) তদুপরি পুলিশ সুপার মেজর সিনহার হত্যা ধামা চাপা দেয়ার জন্য কোনো প্রকার অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান (Internal Enquiry) না করে অপরাধী পুলিশ ইন্সপেক্টরদের সুরে সুর মিলিয়ে তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
::::: শেষ কথা :::::
RAB Forces গঠন হবার পর থেকেই পুলিশ বাহিনীতে Cross-Fire Culture শুরু হয়। Cross-Fire Culture প্রাথমিকভাবে RAB Forces এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু, অধুনা লক্ষণীয় যে পুলিশ প্রায় সব ইউনিট এখন Cross-Fire Culture এ সিদ্ধহস্ত। পুলিশের উর্দ্ধতন প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও প্রশাসন ব্যাবস্থাপনায় অবহেলার কারণে পুলিশের নিচের স্তরের পুলিশ কর্মকর্তাদের এই বেপরোয়া চরিত্র।
পুলিশের তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধে মৃত্যুর মিছিল এখন অগণিত। কিন্তু মেজর সিনহার মতো একজন High Profile & Well Decorated সেনা কমকর্তার বিচারবহির্ভূত হত্যার কারণে এখন সময় এসেছে পুলিশের Cross-Fire Culture এ পুরোপুরি লাগাম টানা। নতুবা পুলিশের Cross-Fire Culture থেকে কেউই নিরাপদ থাকতে পারবে না।
একথা সত্য যে কোনো কর্মকর্তার বা সদস্যের আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড বাহিনীর কর্মকান্ড হিসেবে দায় আরোপ করা যায় না বরং অনুরূপ কর্মকান্ড সেই কর্মকর্তার বা সদস্যের ব্যাক্তিগত দায়। কিন্তু যখন কোনো বাহিনীর সদস্যরা ক্রমবর্ধমান হারে আইন ভঙ্গের প্রতিযোগিতায় মত্ত হয় এবং সেই বাহিনী নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করে, তবে এইরূপ সদস্যদের কর্মকান্ডে বাহিনীর কোনো দায় নেই এমনটি বলার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ নং ৩২ তৎসহ ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ মোতাবেক এক অলঙ্ঘনীয় (Non-Derogable Right) যা একই সাথে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের অনুচ্ছেদ নং ১১ মোতাবেক অলঙ্ঘনীয় মানবাধিকার (Human-Rights)। একজন সামান্য পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ পুলিশ ইন্সপেক্টরের খামখেয়ালিতে একজন মানুষের জীবন এভাবে চলে যেতে পারে না তা সে একজন সেনাবাহিনীর মেজর হোক কিংবা একজন সাধারণ দিনমজুর হোক না কেন।
::::: দ্রষ্টব্য আইন :::::
(১) গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান, ১৯৭২।
(২) দন্ড বিধি, ১৮৬০ (১৬০ সালের ৪৫ নম্বর আইন)।
(৩) নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সালের ৫০ নম্বর আইন)।
বিনীত,
ব্যারিস্টার খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা।
হেড অফ দি ল’ সার্জেণ্টস চেম্বার (এল.এস.সি.)।
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।