বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি দখল এবং উচ্ছেদ হুমকির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধানে নামে বিভিন্ন সাংবাদিকরা। এতে উঠে আসে আরো নানাবিধ তথ্য। ফাইতং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ২০১৬ সালে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হবার পর থেকে এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমানোর বদলে অনুদান আত্মসাৎ, দলীয় কোন্দল সৃষ্টি,স্থানীয়দের জমি দখলসহ আরো নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়েছেন বলে অগ্রযাত্রা কে জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানকালে জানা গেছে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এই জালাল উদ্দিন। এমনকি ২০১০ সালের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তখনকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালিয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বিএনপি প্রার্থীকে জয়ী বানান তিনি। এরপর সাংগাঠনিকভাবে বিএনপি ব্যাকফুটে চলে গেলে ভোল পাল্টে ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিনের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামীলীগের মুখোশ পড়েন জালাল। এবং নানান কৌশলে বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন। যদিও ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং সেখানেই তার স্থায়ী বসবাস কিন্ত অর্থবিত্তের জোরে তিনি ফাইতং ইউনিয়নের ভোটার হয়ে এখানকার চেয়ারম্যান পদে অসীন হয়ে আছেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ফাইতং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম দিয়ে তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। কিন্ত নির্বাচিত হবার পর সেই নেতাকর্মীদেরই প্রতিহিংসার টার্গেট বানিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। ফাইতং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর আলম জানান- তার ৪ কানি জমি জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, বিষয়টি আওয়ামীলীগের উর্ধতন নেতাকর্মীদেরও জানিয়েছেন তিনি,তবে এখনো কোন প্রতিকার পাননি। একই ওয়ার্ডের কয়েকজন মারমা সম্প্রদায়ের বাসিন্দাও ইউপি চেয়ারম্যান জালালের বিরুদ্ধে জমি দখলের সরাসরি অভিযোগ করেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে বহিরাগতদের এখানে পুনর্বাসন করে নিজের ভোটব্যাংক বাড়ানোর নীলনকশা করছেন। ফাইতং ইউনিয়নে জালার উদ্দিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার আগে স্থানীয় পথঘাট আধুনিকায়ন করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচিত হবার পর তিনি অবহেলিত এলাকায় ফিরেও তাকাননি এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে ৯ নং ওয়ার্ডের রোয়াজাপাড়া এলাকায় গিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের চোখে পড়েছে এই এলাকা কতোটা অবহেলার শিকার। চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কের মাত্র ২ কিলোমিটারের মধ্যে এই এলাকার অবস্থান হলেও এই এলাকায় মাটির ভাঙা রাস্তা ছাড়া ভালো কোন পথ নেই। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ভালো রাস্তা না থাকায় বহু মুমূর্ষু রোগী মৃত্যুবরণ করেছে রাস্তাতেই। এলাকায় নেই একটি বড় মসজিদ। এলাকার বাসিন্দাদের উদ্যোগে টিন দিয়ে কোনমতে ছোট একটি মসজিদ বানিয়ে ইবাদাত করেন তারা। যেটা অত্র এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের খামখেয়ালিপনার কারণে রোয়াজাপাড়া এলাকার সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা এখনো বিদ্যুৎবিহীন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ৯নং ইউপি সদস্য সুইম্রা মারমা বলেন- আমি অসংখ্য বার এলাকার ভোগান্তির কথা ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন কে জানিয়েছি কিন্ত তিনি আমার কথা কখনো কানেই তোলেন নি। নির্বাচিত হবার পর থেকে তিনি শুধু নিজের স্বার্থ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন এলাকার উন্নয়নের প্রতি তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে
ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন আরো বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্য। এমনকি বিগত সালে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় “মোরা”য় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য বিভিন্ন সরকারী বরাদ্দ এলে পুরো বরাদ্দের টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন। পরবর্তীতে এ ঘটনার সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির মামলা করে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। এমন আরো অনেক অনুদানই ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনের নিজ স্বার্থে ব্যবহার হলেও জনতার কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া, স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা অভিযোগ করেছেন- ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টি ও বিএনপি জামাতের চিহ্নিত নেতা কর্মীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তাদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আওয়ামী লীগের প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে বিএনপি জামাত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে ধংসের মুখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া একাধিক ত্যাগী নেতাকর্মীরা ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কে রক্ষায় অবিলম্বে উর্ধতন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। সেই সাথে স্থানীয় ভোটারদের দাবি এমন কাউকে যেনো আবারো নতুন করে মনোনায়ন দেয়া না হয় যিনি স্থানীয়দের অবহেলা ও অনুদান আত্মসাতের মতন ঘটনা ঘটাবেন৷ তাই আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন দেবার ক্ষেত্রে তৃণমূলের জনমতকে প্রধান্য দেয়া উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা।