জেলার ইয়াবা ব্যবসা তথা মাদক নিমূল না
হওয়ার নেপথ্যে হুন্ডি ব্যবসা কে দায়ী করেছেন স্বচেতন মহল। মিয়ানমার থেকে
মাদক বা ইয়াবার চালান পাঠানোর কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় হুন্ডির মাধ্যমে।
সীমান্তের সক্রিয় হুন্ডির রাঘব বোয়ালদের আইনের মুখোমুখী করা না গেলে মাদক
নিমূল করা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কঠিন হবে বলে মত দিয়েছেন
তারা।অনুসন্ধানে জানা
যায়,জেলার দুই সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী
সিন্ডিকেট রয়েছে। এর বাইরে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প সমুহে রয়েছে
স্থানিয় ও রোহিঙ্গা মিলে হুন্ডির শক্তিশালী নিটওয়ার্ক। এসব হুন্ডি
ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা দেশ-বিদেশ থেকে টাকা এনে বিলি বন্টন যেমন করে।
অপরদিকে সমান তালেই মাদকের টাকা ও হন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করে ইয়াবা
ব্যবসায়ীরা। সুত্রে আরো প্রকাশ- নেপথ্যে যাঁরা দেশে ইয়াবা আনতে মূল
চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছেন, তাঁরা সবাই হুন্ডি ব্যবসায়ী। কীভাবে দেশ
থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে ইয়াবা কেনার টাকা পাচার
হচ্ছে, তা বের করতে তৎপর হয়ে উঠছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশও।ইতিমধ্যে
টেকনাফে এই ধরণের ২৩ জন হুন্ডি ব্যবসায়ীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। তাঁদের
মধ্যে একজন দুবাইয়ে বসে হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে পুলিশের
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গেল বছর সমুহে
ইয়াবা কারবারিদের পর পর দুই বার আত্মসমর্পণ, গ্রেপ্তার, বন্দুক যুদ্ধ সহ
নানা রকমের অভিযানের মধ্যে ও ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়নি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ প্রশাসন নতুন
করে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর আরও অনেক তথ্য।
কারণ, ইয়াবা আমদানির সঙ্গে জড়িত বড় মাপের ইয়াবা গডফাদার রা এখনো রয়ে
গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এবার ইয়াবা ব্যবসায়ী ও হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে
পরিচিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যৌথ ভাবে অভিযানে নামার প্রস্তুতি তে
রয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইয়াবা
কারবারি ও বাহকরা মাদক ব্যবসার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও নেপথ্যে
যারা দেশে ইয়াবা আনার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে, তারা মূলত হুন্ডি
ব্যবসায়ী। কীভাবে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে
ইয়াবা কেনার টাকা পাচার হচ্ছে, তার তথ্য বের করেছে পুলিশ। কক্সবাজার ও
টেকনাফে এ রকম ৩৩ হুন্ডি ব্যবসায়ীর সন্ধান মিলিছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন
দুবাইয়ে বসে হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে।
পুলিশের তদন্তে মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আসছে।
টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বেশিরভাগ ইয়াবা ঢুকছে। ইয়াবা কারবারিরা বাহকের
মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর ইউনিট ইয়াবার কারবারি, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ডনদের নতুন তালিকা তৈরি
করছে। এতে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নামও উঠে আসছে।
তারা দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ভারতে ইয়াবার টাকা পাচার করছে।
কক্সবাজারের পুলিশ ইতিমধ্যে ২২ হুন্ডি ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে।
তাঁরা হলেন টেকনাফের মধ্যম জালিয়াপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, নামার
বাজারের বদি আলম, সাতকানিয়ার মো. উসমান (টেকনাফে কাপড়ের দোকান আছে),
গোদারবিলের টিক্কা কাদের, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মো. ইসহাক, মো. ইয়াসিন, মো.
ওসমান, মো. তাহের ও আবুল আলী (সাংবাদিক), টিটি জাফরের ভাই কালা মিয়া ওরফে
ল্যাংগা কালা, ল্যাংগা কালার ছেলে মো. সাইফুল, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো.
খুরশিদ, ডেইলপাড়ার মো. আমিন, শীলবুনিয়াপাড়ার মো. শফিক, কুলালপাড়ার আবদুর
রশিদ ওরফে ভেক্কু ও মো. সাইফুল, কেকেপাড়ার মো. আইয়ুব ওরফে বাট্টা আইয়ুব,
নামার বাজারের মো. ইসমাইল, কুলালপাড়ার মো. শওকত, লেঙ্গুর বিলের মোহাম্মদ
আলী, পল্লান পাড়ার মো. ফারুক ও সৈয়দ করিম। তাঁদের মধ্যে জাফর আলম দুবাইয়ে
রয়েছেন। শুধু আবুল আলী টেকনাফে আছেন। অন্যরা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছেন।
টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ
ওসমান।খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উখিয়ায় নিষিদ্ধ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা অপ্রতিরোধ্য
হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে
হুন্ডির মাধ্যমে প্রকাশ্যে বিতরণ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ
ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট।এছাড়াও ইয়াবার টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে হুন্ডিই একমাত্র মাধ্যম। তাই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টাকার জোগান দিতে হুন্ডি ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। এসব লেনদেনে
সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আয় বা রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ
রয়েছে চাকবৈঠা, পূর্বডিগলিয়া, ডেইলপাড়া, তেলীপাড়া গ্রামের, জালিয়াপালং
ইউনিয়নের সোনারপাড়া, পাইন্যাশিয়া গ্রামের ২০-২৫ সদস্যের বিশাল একটি
হুন্ডি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অবৈধ টাকা বিতরণে লিপ্ত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের
পাশাপাশি উখিয়ার প্রায় শত শত লোক মধ্যপ্রাচ্যে থাকার সুযোগে। বিদেশে
অবস্থানরত এসব প্রবাসী তাদের উপার্জিত টাকা ব্যাংকিং লেনদেনের পরিবর্তে
বেশিরভাগ অবৈধভাবে হুন্ডির চ্যানেলে পাঠিয়ে থাকে। স্থানীয়রা বলেছেন, এত
অভিযান সত্বে ও এখনও আড়ালে থেকেই যাচ্ছে ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বড়
একটি অংশ। কক্সবাজার জেলা
পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, মাদক বিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা
হবে। পাশাপাশি পুলিশের তালিকায় থাকাহুন্ডি ব্যবসায়ীদেরও আইনের আওতায় আনা
হবে। তিনি জানান, যে কোনোভাবে এই দেশকে মাদকমুক্ত করা আমাদের সবার নৈতিক
দায়িত্ব।