খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,গত ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার হ্নীলা দরগা এলাকার জনৈক কালু এবং দদাইয়্যা হ্নীলা এলাকার নোহা চালক নুরুল বশর এবং নুরুল হুদাকে ভাড়া করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করা নিকটাত্মীয়দের নিয়ে আসতে পাঠায়। গাড়ীতে করে দদাইয়্যাও ক্যাম্প এলাকায় যান। ক্যাম্পে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দদাইয়্যা বলে যে,সামনে মরকজের পাশে আমার আত্মীয়রা অবস্থান করছে তাদেরকে নিয়ে আসার পথে আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে নিও বলে নোহা থেকে নেমে পড়ে। নামার সময় চালক নূরুল বশর থেকে দদাইয়্যা খরচের জন্য ৫০টাকা ধার নেন।
ফেরত আসা নোহা চালক নূরুল বশর জানান,ওই দিন হ্নীলা দরগাপাড়া এলাকার মৃত লম্বা বক্করের পুত্র ছৈয়দ আলম কালু কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী তার মামাসহ নিকটাত্মীয়দের নিয়ে আসতে সাড়ে ৩হাজার টাকায় নোহা গাড়ীটি ভাড়া করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছৈয়দ আলম কালুর ভাই শামসুল আলম ওরফে দদাইয়্যাসহ অপর ড্রাইভার নূরুল হুদাও যান। তিনি আরো বলেন,ক্যাম্প এলাকায় পৌঁছলে কালুর ভাই দদাইয়্যা ৫০ টাকা নিয়ে মাঝ পথে নেমে পড়ে। নামার সময় সে বলে যে মরকজের পাশে আমার স্বজনরা দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে নিয়ে আসার পথে আমাকে উঠিয়ে নিও। তার কথা মত মরকজের সামনে গিয়ে স্বজনদের গাড়ীতে উঠিয়ে চৌরাস্তায় পৌঁছলে অস্ত্র সজ্জিত শতাধিক লোক হায়েনার মত মুহুর্তের মধ্যে নোহা গাড়ীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলায় ড্রাইভার নূরুল হুদা এবং এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ওই সময় নোহা চালক নূরুল বশর হামলায় আহত হয়ে একটি বাড়ীতে আশ্রয় নেন। পরক্ষণে ১০/১২ জন লোক এসে গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা নূরুল বশরকে লাথি, কিল ও ঘুষি মেরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে বশরকে চোখে কাপড় বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালায়। গভীর রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি আহত নোহা চালকে স্থান পরিবর্তন করে তাদের দলনেতার কাছে নিয়ে যান। পরের দিন পুরোটা সময় অন্ধকার একটি গুহায় চোখ বেঁধে তাকে ফেলে রাখে। দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ২রাত ১দিনে গুরুতর আহত বশরকে এক মুঠো ভাত পর্যন্ত দেয়নি। একদিকে ক্ষুধার জ্বালা অন্যদিকে দা’র কোপের ব্যাথায় অতীষ্ট নোহা চালক মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন বলে জানান। এসময় তিনি শুধু আল্লাহকে ডেকেছেন এবং অজর নয়নে কাঁদছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা টিভি রিলে কেন্দ্রস্থ পাশের ঝিরিতে চোখ বন্ধ অবস্থায় বশরকে রেখে চলে যায়। পরে আহত বশর কাপড় খুলে কোনমতে রাস্তায় উঠে সিএনজি এবং বাসে করে বাড়ীতে ফেরত আসেন। এক সপ্তাহ পার হলেও ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইন শৃংখলা বাহিনী। তবে নোহা চালক নূুরুল বশর গাড়ী ভাড়ায় সম্পৃক্তরা উক্ত ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করছেন। স্থানীয় সচেতন মহলও দদাইয়ার মাঝ পথে নেমে যাওয়াকে সন্দেহের দিকে দেখছেন।
গাড়ী ভাড়ায় সম্পৃক্ত ছৈয়দ আলম কালু জানান,আমার ভাইয়ের স্বজনদের নিয়ে আসতে গাড়ীটি ভাড়া করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল ঠিক। তবে তিনি এঘটনায় কোন ধরণের সম্পৃক্ত নয় বলে দাবী করেন। জানতে চাইলে নিহত নূরুল হুদার ছোট ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন,উক্ত ঘটনায় কালু এবং দদাইয়্যা দায়ী। তারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্ট স্বজনদের নিয়ে আসতে আমার ভাই এবং বশরকে তথ্য গোপন করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। তাই পুরো ঘটনার মূল নায়ক এই সহোদর। তিনি ভাই হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান,ঘটনার নেপথ্য খু্জে বের করা খুবই জরুরী। উখিয়াতে গাড়ীর অভাব নেই। এত্ত কি প্রয়োজন ছিল? হ্নীলা থেকে গাড়ী ভাড়া করে পাঠানোর! তিনি বিলম্ব না করে ঘটনায় সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করার দাবী জানান। জানতে চাইলে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনজুর মোরশেদ বলেন,এঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি ঘটনায় সম্পৃক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন বলে জানান।